বিরিশিরি ভ্রমন ৪ :চীনা মাটির পাহাড়ে


সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিক্সা হাজির। নাস্তা গোসল করে রাওনা হতে হতে সকাল নয়টা। আমাদের প্রথম গন্তব্য বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড়। সোমেশ্বরী নদী পার হতে হবে। অবশ্য নদীর বেশিরভাগ অংশ সবাই হেটেই পার হয়।


নদীর খুব সামান্য অংশতেই পানি আছে। সেটুকু পার হলাম নৌকা করে রিক্সা সহ।


গ্রামের ভাঙাচুরা রাস্তায় রিক্সা চলে। কোথাও কোথাও মাটির রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে রিক্সা থেকে নেমে যেতে হয়। তবে হাটা বা রিক্সায় নিরিবিলি পথে চলতে বেশ ভালো লাগে। দুই পাশে দিগন্ত বিস্তৃত ধান খেত। সমতল ভূমি শেষ হলেই দূরে পাহাড় দেখা যায়। সেগুলি ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়। মুকুল বলে, ‘সব পাহাড় ইন্ডিয়ায় পরেছে আমাদের একটাও দেয় নাই’। দেড় ঘন্টা চলার পর পৌছলাম চীনা মাটির খনি এলাকায়।

চীনা মাটির পাহাড়ের পাশে সুন্দর লেক। পাহাড় থেকে চীনা মাটি সংগ্রহ করার পর সেটা লেক হয়ে গিয়েছে। নিরিবিলি কোলাহলবিহীন ছিমছাম শান্ত পরিবেশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন পরিবেশে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা যায়।

চীনা মাটির পাহাড় দেখতে লেক পার হয়ে সামনে যাই। জানতামনা কি বিষ্ময় অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। ছোট আরেকটা লেক। কিন্তু এটার পানির রং নীল। এমন নীল যে মনে হবে ক্বত্রিম ভাবে রং মেশানো হয়েছে। অবিশ্বাস্য! আমারা সবাই তব্ধা হয়ে বসে রইলাম পাড়ে।

রিক্সাচালক সুমন ও সোলাইমান আমাদের নামিয়ে দিয়ে পাহাড়ের নীচে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে বলেছিল। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল ওরাও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। পরম উৎসাহে গাইডের ভূমিকা পাল করতে লাগল।

এখানে কয়েকটা সাদা মাটি বা চীনা মাটির খনি আছে। যেগুলো বিভিন্ন কোম্পানীকে লীজ দেয়া আছে। ওরা মাটি কেটে বস্তায় ভরে ট্রলারে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায়। তারপর এইসব মটি দিয়ে চীনা মাটির তৈজসপত্র তৈরী হয়। চীনা মাটির পাহাড় দেখা হলো। এইবার আমাদের গন্তব্য টংক আন্দোলন ও এই আন্দোলনের নেত্রী রাশিমনি হাজং এর স্মরণে নির্মিত স্মৃতি সৌধ।

ভুলে গেছি, সম্ভবত ১৯৯১ সালে টংক আন্দোলনের স্মরণে এই সৌধটা নির্মান করা হয়। বৃটিশ শাসনামলে কমরেড মনিসিংহের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী এ আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী ও অন্যতম প্রধান নেত্রী জীবন্ত কিংবদন্তি কুমুদিনী হাজং এটার উদ্বোধন করেন। আজ আমাদের প্রধান লক্ষ্য কুমুদিনী হাজং কে চাক্ষুস দেখা। তাঁর মত ঐতিহাসিক চরিত্রের সাথে কথা বলে ধন্য হওয়া। তিনি বেঁচে আছেন এটা জানা আছে। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা জানিনা। তবে হৃদয় হাজং বলেছিল সৌধের আশে পাশের কোনো গ্রামে তিনি থাকেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যাপিত জীবন : কন্যার আগমন

যাপিত জীবন: মিছিল শ্লোগান অবশেষে ডিগবাজী অবলোকন