বিরিশিরি ভ্রমন ২ : সোমেশ্বরীর বুকে

শুক্রবার খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায়। গোসল, নাস্তা করে রেডি হতে হতে মুকুলের ফোন। কথামতো সকালেই পৌছে গেছে বাসস্ট্যান্ডে। মুন্নি, রিমঝিম এবং আমিও আট টার মধ্যে মহাখালী পৌছে যাই। ইকবাল আসে সাড়ে আট টায়। টিকেট কেটে বাস ছাড়ার অপেক্ষা। কয়েক পর্ব চা সিগারেট খাওয়া হয়ে যায়।

সাড়ে আট টায় বাস ছাড়ার কথা কিন্তু বাস ছাড়ার লক্ষণ নাই। সমস্যা হয়েছে যাত্রী হয়েছে মাত্র সাত জন। পরে আমাদের বাসের সাতজনকে ৯ টার সময় যে বাস ছাড়ার কথা সেটায় ট্রান্সফার করা হয়। বাস বদলের পর শুরু হয় ঢাকা টু বিরিশিরি যাত্রা। ডাইরেক্ট বাস হলেও যায়গায় যায়গায় লোক উঠায়। নেত্রকোনা পর্যন্ত্য রাস্তা মোটামুটি হলেও তারপর থেকে শুরু ভাঙাচুরা রাস্তা। কয়েকটা স্থানে ব্রিজ ভাঙা। গাড়ি রাস্তা ছেড়ে নিচে ফসলের জমিতে নেমে ভাঙা অংশ পার হয়। বর্ষাকাল না হওয়াতে রক্ষা খেতের উপর দিয়ে যাওয়া গেছে। নাইলে সরাসরি বিরিশিরি যাওয়া সম্ভব হত না।

বিস্তর ঝাকুনি খেতে খেতে বিরিসরি পৌছলাম দেড়টার সময়। মনে সাড়ে চার ঘন্টা লাগলো। বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিট খানেক লাগল উপজাতীয় শিল্পকলা একাডেমি পৌছতে।


শুক্রবার বলে একাডেমি বন্ধ। একাডেমির উপ পরিচালক ছুটিতে। গেস্ট হাউসে পরিচালকের এটেন্ডেন্ট হৃদয় হাজং রুম খুলে দেয়। গোসল করে ফ্রেস হওয়ার পর খাবার এর চিন্তা। ইকবাল হৃদয় হাজং এর সাথে আলোচনা করে ঠিক করে ভাত খেয়ে বিকালে কোথায় ঘুরতে যাওয়া হবে। হৃদয় হাজং রিক্সা চালকদের বুঝিয়ে দেয় কোথায় কোথায় যেতে হবে। দুইটা রিক্সা নিয়ে আমরা দূর্গাপুরে নিরালা হোটেলে গিয়ে পেট ভরে ভাত খাই। এইবার ঘুরে দেখার পালা। রিক্সা চালকরা মিনিট দশেক চালিয়ে এক যায়গায় থামায়। একটা একতলা বিল্ডিং সাইনবোর্ডে লেখা নাম এমকে ল্যাবরেটরিজ। এইখানে দেখার কি আছে জিজ্ঞাস করলে বলে এইটাই ইকবালের বলা যায়গা। কিছু একটা ভুল হয়েছে বুঝে আমরা ইকবালকে দুয়ো দিয়ে পরবর্তি গন্তব্য সুসং রাজার বাড়ি তে যেতে বললাম। বেচারা ইকবাল টিটকারি টিপ্পনি নীরবে হজম করল।

এখানেও ধরা। রাজার বাড়ি খুঁজে পেলাম না। মূল রাজার বাড়ি নাকি ভেঙে কলেজ বানানো হয়েছে। আগের দিনের একটা স্থপনা অবশ্য পাওয়া গেল। পুরান একটা বাসা সাইনবোর্ডে লেখা উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাস ভবন, সেটা সম্ভবত রাজাদের কাচারি ঘর হবে। আমরা মোটামুটি আশাহত হয়ে চিন্তা করলাম এইসব দেখে টেখে কাজ নাই। বরং সোমেশ্বরী নদীতে ঘুরে আসি।

আবারও মিনিট দশেক চলার পর সোমেশ্বরী নদীর উপর ব্রীজে। সেখান থেকে নদীর দৃশ্য খুব মনোরম। দূরে মেঘালয়ের পাহাড় দেখা যায়।
birishiri2
নদীতে অবশ্য পানি খুবই কম। কোথাও হাটু পানিও নাই। লোক জন অল্প পানিতে কয়লা তুলছে। একটা নৌকা ভাড়া করা হলো। নৌকায় উঠার সময় একজন কয়লা উত্তোলন কারীর সাথে দেখা। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। হাসি মুখে জানাল আজকের মত কাজ শেষ। দুইশ চল্লিশ টাকার কয়লা তুলেছে আজ। মাছ ধরার ঠেলা জাল দিয়ে নদীর বালু পানি ছেকে কয়লা সংগ্রহ করে। একমন আড়াইশ টাকার মত বিক্রি হয়।
brishiri4
সোমেশ্বরীর পানি শুকিয়ে শুধু বালু আর বালু। পানির ধারা খুবই অল্প। কোথাও নৌকাও চালানো কষ্ট। সবাই নদীর মাঝখানে নৌকা থেকে নেমে অল্প পানিতে হাটাহাটি করলমা কিছুক্ষণ।
birishiri
লোকজন দেখলাম বালু গর্ত করেও কয়লা তুলছে। এক মহিলার ছবি তুলতে গেলে বিরক্ত হয়ে সরে গেলেন। বলেন, ‘আমাগো অত রং নাই’।
brishiri-sunset
নদীর মাঝখানে পানিতে বালুতে হাটাহাটি করে, সুর্যাস্ত দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এল।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যাপিত জীবন : কন্যার আগমন

যাপিত জীবন: মিছিল শ্লোগান অবশেষে ডিগবাজী অবলোকন