যাপিত জীবন : কন্যার আগমন


আমার বউ কনসিভ করার কয়েক মাস পর থেকেই কিছু জটিলতা দেখা যায়। ওর ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। আর কিছুটা ডিপ্রেসন ভুগে। তাই প্রতি সপ্তাহে ডাক্তারের কাছে চেকাপ করাতাম।

আট মাস পার হয়ে গেছে। বউ এর পেটের ভিতর বাচ্চার নড়াচড়া তখন স্পষ্ট। ডাক্তারের দেয়া ডেলিভারির ডেট ছিল আরো একমাস পর। সেদিন বউ বলছিল বাচ্চা নড়াচড়া করছে না আর পেটের এক পাশে সরে গেছে। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরদিন ছিল ডাক্তারের কাছে এপয়নমেন্ট। ভাবছিলাম ঐদিন গিয়ে ডাক্তার দেখাবো। এমন সময় মা দেখে বলল, 'এখনই ডাক্তারের কাছে যাও, এসব নিয়া গাফিলতি করা ঠিক না'। ফোনে সিরিয়াল নিয়ে বিকালে ডাক্তারের চেম্বারে চলে গেলাম।

ওনেক রোগী। প্রায় দেড় দুই ঘন্টা লেগে গেল । দেখা গেল বউ এর ব্লাড প্রেসার এবনরমালি অনেক হাই। ডাক্তার দেখেই বললেন ওপারেশন করতে হবে এবং ঐদিনই । আধা ঘন্টার মধ্যে প্রস্তুত হতে হবে। মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কোন প্রস্তুতি তো ছিলইনা , আরা টাকাও নিয়ে যাই নাই। মাকে ফোন করে টাকা পয়সা নিয়ে আসতে বললাম। বন্ধু মাসুম কে ফোন করে কিছু টাকা ও শাহবাগ থেকে ওষুধ আনতে বললাম। যেটা ডাক্তার বলেছিল অপারেশেনের পর লাগতে পারে।

বউ অপারেশনে খুব ভয় পেত। আর চাইছিল মা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কিন্তু ডাক্তার রাজী হয় না, দেরী করলে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। অনেক বুঝিয়ে রাজী করালাম। কাঁদতে কাঁদতে ও ডাক্তারে সাথে ওটির ভিতর গেল। আমি একবার নীচে গিয়ে দেখি মা আসে কীনা আবার ওটির সামনে এসে দাড়াই।

মা যখন আসে তখন অপারেশন শুরু হয়ে গেছে। মসুমও চলে এসেছে। মা সাথে আসা মামীকে জিনিসপত্র কিনতে পাঠিয়ে দেয়। বাইরে অন্যান্য রোগীর লোকজনদের সাথে অপেক্ষা করছি। ঘটনার আকস্মিকতা, বউ এর ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যাওয়া, অপারেশন এইসব নিয়ে আমার কেমন যেন বোধশুন্য অবস্থা।

রাত সাড়ে নয়টার দিকে নার্স বউএর ওড়না ভাঁজ করে তার উপর শোয়া নবজাতকে মার হাতে তুলে দেয়। ছোট ছোট হাত পা, মুখ , ছোট মাথা ভর্তি কালো চুল, ছোট্ট একটা মানুষের বাচ্চা বড় বড় চোখ করে চারিদিকে দেখছে। কেমন যেন স্বপ্নের মত মনে হয়। এই আমার মেয়ে! কোলে নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি, রিমঝিমও(আমার মেয়ে) আমার দিকে তাকায়। ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য অপার্থিব একটা অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে যাই।

বাচ্চাকে নিয়ে মা আর মামী চলে যায়। আর আমি থাকি ওটি থেকে মুন্নীর বের হবার অপেক্ষায়।

সাধারণত আমার কোন জিনিসই ভাল ভাবে হয় না। সব বয়াপারে ঝামেলা হয়ই। অন্য যাদের সিজার হয়েছে একে একে সবাই চলে এসেছে শুধু আমার বউ ছাড়া। অপারেশনের পর তাকে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে। প্রেসার নরমাল হলে বের করা হবে। রাত বারটার দিকে খবর আসে রাতে ওখানেই রাখা হবে, পরদিন কেবিনে নেয়া হবে। দুশ্চিন্তা নিয়ে নিচে চলে আসি।

এদিকে মা আর মামী রিমঝিমকে সামনে নিয়ে না ঘুমিয়ে রাত পার করে দেয়। আর আমি আনন্দ ও দুশ্চিন্তা নিয়ে হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে সকালের অপেক্ষা করতে থাকি।

মন্তব্যসমূহ

শরীফ-আর-রাফি বলেছেন…
ক্লিকাইয়া গেলাম আপনার ব্লগ।
হাসান রায়হান বলেছেন…
আরে! আপনে এইখানে কিভাবে আসলেন?

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যাপিত জীবন: মিছিল শ্লোগান অবশেষে ডিগবাজী অবলোকন